দিন আনি দিন খাই কষ্টের সংসারে হতদরিদ্র বঙ্গ সন্তান যা করে দেখালেন,স্যালুট নেটিজেনদের!

বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি, সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। কিন্তু, দারিদ্রতার দোহাই দিয়ে মেধার সঙ্গে প্রতারণা করেননি আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) বাপ্পা সাহা। আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন দক্ষিণ মাঝেরডাবরি এলাকার বাসিন্দা বাপ্পা। বাংলা মাধ্যমেই পড়াশোনা বাপ্পার। তিনি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের গোবিন্দ হাইস্কুলে। সেখানেই সায়েন্সে উচ্চমাধ্যমিকেও পড়াশোনা করেন তিনি। ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাপ্পা।

চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট করে BSC পাশ করার পর সেই বছরই এগ্রিকালচার স্ট্যাটিসস্টিক্যাল নিয়ে দিল্লির ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচার ইন্সটিটিউটে MSC-তে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।একইসঙ্গে সর্বভারতীয় বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নিচ্ছিলেন প্রস্তুতিও। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনপরিচালিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় সর্ব ভারতীয় স্তরে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনি। পাড়ার ছেলের সাফল্যে খুশি প্রতিবেশীরাও। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই এই সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।

চলতি বছরের জুন মাসে বাপ্পা সাহা ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরিচালিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষা দেয়। সেখানে ভালো র‍্যাঙ্ক করে আলিপুরদুয়ারের এই যুবক। গত ১৯ ডিসেম্বর দিল্লির ইউপিএসসি ভবনে অনুষ্ঠিত হয় ইন্টারভিউ রাউন্ড। যার ফলাফল বার হয়েছে গত বুধবার। সেখানেই দেখা যায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন আলিপুরদুয়ারের বাপ্পা।

এই সাফল্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বাপ্পা সাহা বলেন, “স্নাতকস্তরে পড়াশোনা করার সময় এই পরীক্ষার বিষয়ে জানতে পারি এবং আমার প্রস্তুতি শুরু হয়। আমার সাফল্যে পরিবারের সকলের অবদান রয়েছে।”এই সাফল্যের জন্য কত সময় ধরে পড়তে হয়েছে তাঁকে?এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বাপ্পা বলেন, “আলাদা করে বাধাধরা কোনও নিয়ম আমার ছিল না। তবে যেই সময় পড়াশোনা করতাম তখন সেই দিকেই মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

ছেলের সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি পরিবার। বাপ্পার বাবা গোপাল সাহা পেশায় রাজমিস্ত্রি। কিন্তু, ছেলের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অভাব যাতে কোনও সময় বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য প্রথম থেকেই সচেতন ছিলেন তিনি। একসময় হ্যারিকেনের আলোতেও পড়াশোনা করতে হয়েছে বাপ্পাদের। কারণ, বাড়িতে ছিল না বিদ্যুৎ। এখন অবশ্য তিনি ছোট একটি পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। আর এই অভাবের তাড়নার কথা ভোলেননি বাপ্পা। তিনি জানান, এলাকার দরিদ্র শিশুদের জন্য তিনি কাজ করতে চান। বাংলা মাধ্যমে পড়েও মেধা দিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে সাফল্য অর্জন করা যায় তা কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বাপ্পা।