“আমার সাফল্যের জন্য ও দায়ী,ওর জন্যই উইকেট পেয়েছি”: সিনিয়র প্লেয়ারকে সব কৃতিত্ব দিলেন ইবাদত!

সংবাদ সম্মেলন শুরু হলো মাত্র। ইবাদত হোসেন দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না দিতেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে হাজির আফগানিস্তানের প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট। ইবাদতের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শেষ হলে ট্রটের পালা আসার কথা। ট্রটকে যেন বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে না হয়, সে জন্যই হয়তো ইবাদতের সংবাদ সম্মেলন শেষ হলো মাত্র ছয়টি প্রশ্নে। কিন্তু আগুনে বোলিংয়ে ৪৭ রানে ৪ উইকেট নেওয়া ইবাদতের কথা আরও কিছুক্ষণ শুনতে চাচ্ছিলেন সংবাদকর্মীরা। তাই সংবাদ সম্মেলনকক্ষের বাইরেই হয়ে গেল ইবাদতের আরও একটি সংবাদ সম্মেলন।সেখানে ইবাদত জানালেন পেস বোলিং নিয়ে তাঁর লক্ষ্যের কথা। তিনি ঘরের মাঠে পেস বোলিং–সহায়ক উইকেট চান। যেখানে গতিই হবে শেষ কথা।

উইকেটের বাউন্স ভড়কে দেবে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে। থাকবে সুইং ও সিম মুভমেন্ট। আর এমন উইকেট পেতে হলে এখন যে উইকেটে খেলছেন, সেখানেই পারফর্ম করতে হবে বাংলাদেশের পেসারদের। তবেই মিলবে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা। আজ ড্রেসিংরুমে যেতে যেতে ইবাদত বলে গেলেন এ কথাটা, ‘ভালো খেললে তো আত্মবিশ্বাস আসবেই। ভালো করছি। আশা করছি, এতে তাদের (টিম ম্যানেজমেন্ট) একটা আস্থার জায়গা তৈরি হবে।’সেটা এত দিনে নিশ্চয়ই কিছুটা তৈরি হয়েছেও। সে জন্যই মিরপুরের স্পিন স্বর্গে সবুজ ঘাসের উইকেট তৈরি করা। ইবাদতের ২০ টেস্টের ক্যারিয়ারে নাকি ঘরের মাঠে এমন উইকেটে বল করার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম, … তিনি বলেন …‘ঘরের মাঠে এ ধরনের উইকেট আমার প্রথম দেখা। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে যে তিনজন ফাস্ট বোলারের এ রকম উইকেটে খেলা…

এটা আমাদের অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করেছি, ওদের যেন কম রানে আউট করা যায়। আমরা যে পরিকল্পনা করেছিলাম, সেটা কাজে লাগাতে পেরেছি।’সে পরিকল্পনার কথাও জানালেন ইবাদত, ‘আমি ব্যাটসম্যানকে সামনে বল করে সেটআপ করেছি। এরপর সারপ্রাইজিং বাউন্সার করছি। আগে দেখা যাচ্ছে আমি ইনসুইং-আউট সুইং করিয়ে ওভারে দুই-তিনটি বাউন্সার করতাম। উইকেটে বাউন্স থাকায় সেটআপ করে সারপ্রাইজিং বাউন্সার দেওয়া সহজ হয়েছে।’আজ কন্ডিশনও ছিল ইবাদতের পক্ষে। দুপুরের মেঘলা আকাশের নিচে গুড লেংথ থেকে পেসাররা যথেষ্ট সিম মুভমেন্ট পেয়েছেন।

বিশেষ করে ইবাদত মিরপুর স্টেডিয়ামের থানা প্রান্ত থেকে বল করার সময় পেয়েছেন বাতাসের সাহায্য, ‘উইকেটে আজ বাউন্স বেশি ছিল। আর ওই পাশ থেকে যখন বল করছিলাম, তখন বাতাস অনেক সাহায্য করেছে।’আফগান ব্যাটসম্যানদের মতো কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জটা সামলাতে হয়েছে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদেরও। সকালের সেশনে মাত্র ২০ রান যোগ করেই বাংলাদেশ দল শেষ ৫ উইকেট হারায়। যার সব কটিই নিয়েছেন দুই আফগান পেসার। ইবাদতও তাতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, ‘আবহাওয়া মেঘলা ছিল। বাতাস ছিল। আমরা যত তাড়াতাড়ি মাঠে নামব, তত দ্রুত ওদের উইকেট নিতে পারব। এটা মাথায় ছিল।’

ইবাদতের সুযোগ ছিল ৫ উইকেট নিয়ে বল উঁচিয়ে মাঠ ছাড়ার। কিন্তু স্লো ওভার রেটের ঝুঁকি থাকায় অধিনায়ক লিটন দাস চা–পান বিরতির ২ ওভার আগে থেকেই দুই প্রান্ত থেকে স্পিনারদের বোলিংয়ে আনেন। দলের জন্য টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট নেওয়া হলো না ইবাদতের, ‘৫ উইকেট হয়নি। তবে আমরা ২ ওভার পিছিয়ে ছিলাম। আমরা যদি পিছিয়ে থাকি তাহলে তো সমস্যা। এ জন্য অধিনায়ক দুই পাশ থেকে দুজন স্পিনার দিয়ে শুরু করে। যেহেতু দল সবার আগে, সেদিক দিয়ে ঠিক আছে। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে আমার কাছে দলের চাওয়াটা বড় বিষয়।’এর আগেও এক মিরপুর টেস্টে ৪ উইকেটে থেমেছে ইবাদতের স্পেল। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তবে সে ম্যাচটা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরেছে। এবারের ৪ উইকেট বাংলাদেশকে গড়ে দিয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের মঞ্চ।