রোনাল্ডো-ফার্নান্দো স্যান্টোসের ইগোর লড়াইয়ের সুযোগে ইতিহাস গড়ে শেষ চারে মরক্কো!

নেইমার ও তাঁর ব্রাজিলের পর এবার বিশ্বকাপ না পাওয়ার তালিকায় নাম লেখালেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। লেখা ভালো নাম লেখাতে বাধ্য হল তাঁর পর্তুগাল। প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নেমেই ইতিহাস গড়ল মরক্কো। তাও আবার শেষ কয়েক মিনিট ১০ জনের হয়ে গিয়েছিল। তবুও হাল ছাড়েনি উত্তর আফ্রিকার দল। মাত্র ১ গোলের পুঁজি নিয়েই সেমি ফাইনালের টিকিট পেয়ে গেল ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের লড়াকু ছেলেরা। কেরিয়ারে অনেক কিছু পেয়েছেন ‘সি আর সেভেন’। এই সোনার ট্রফি তাঁর ক্যাবিনেটে ছিল না। থাকবেও না। কারণ তাঁর পর্তুগাল যে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়ে ফেলেছে।

এমন বিদায়ের জন্য অনেকেই রোনাল্ডোকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিতর্কের জন্য হতে পারে। তবে এটা লিখতে দ্বিধা নেই যে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-ফার্নান্দো স্যান্টোসের ইগোর লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে ইতিহাস গড়ে সেমি ফাইনালে চলে গেল মরক্কো। আর তাই পর্তুগিজ মহাতারকার ক্যাবিনেটে বিশ্বকাপটা অধরাই থেকে গেল। চোখের জলে কাপ যুদ্ধ থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালকে বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে নিয়ে আসা রোনাল্ডো। ‘ভোচে রিয়েলমেন্তে আচা কোয়ে ই উমা বোয়া আইডিয়া?’ একাধিক পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যমের দাবি, সুইজারল্য্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের দিন সকালে নাকি রোনাল্ডো তাঁর কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোসকে এই প্রশ্নটা করেছিলেন। বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘আপনার সত্যি মনে হয় এটা ভালো আইডিয়া?’

সুইসদের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোকে শুরু থেকে বসিয়ে রাখার জন্য তাঁকে সমালোচনা হজম করতে হয়েছে। তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁকে ব্যাপক ট্রোল করেছেন রোনাল্ডো অনুরাগীরা। কিন্তু দল জেতায় সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন ফার্নান্দো স্যান্টোস। কিন্তু এবার আর পর্তুগাল বাঁচল না। কোচের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নাকি দলের মহাতারকার সঙ্গে ‘ইগো’-র লড়াই! কোন কারণে কাতার বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতে পর্তুগাল বিদায় নিল সেটা নিয়ে পোস্টমর্টেম কিন্তু অনেক বছর ধরে চলবে। দুজনের কেউ মুখ ফুটে স্বীকার না করলেও ফার্নান্দো স্যান্টোসের সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিবাদের কথা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’।

শেষ ষোলোতে সুইজারল্য্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬-১ গোলে জেতা ম্যাচে, অধিনায়ককে ৭২ মিনিট পর্যন্ত বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন পর্তুগালের কোচ। শেষ আটের ম্যাচেও সেই এক ছবি। এবার নামলেন ৫১ মিনিটে। রুবেন নেভাসের পরিবর্ত হিসেবে। তাও আবার তাঁর দেশ যখন এক গোলে পিছিয়ে রয়েছে। দলের নেতা মাঠে নামতেই উত্তাল হয়ে উঠল আলথুয়ামা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। ক্যামেরা ফোকাস করল তাঁর পরিবারের দিকে। দেখা গেল কি যেন একটা বিড়বিড় করে বলেই চলছিলেন তাঁর ‘সোল মেট’ বান্ধবী জর্জিনা রডরিগেজ। কিন্তু তাঁর প্রেমিকের মাঠে নামা পূর্ণতা পেল না। তবে এর আগের মুহূর্তগুলো শুধু তো ছবি নয়। বেঞ্চে বসে থাকা লোকটা এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। বয়স ৩৭ হয়েছে। ফিটনেস আগের মতো নেই।

একনাগাড়ে বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। তবুও তো দিনের শেষে তাঁর নাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। পর্তুগিজ ফুটবলকে বিশ্ব মঞ্চে সাবালোক করে দেওয়া যোদ্ধাই পরপর দু’টি মোক্ষম ম্যাচে শুরু থেকে ব্রাত্য! তবে চাপে পড়ে সেই রোনাল্ডোর দিকেই এগিয়ে যেতে হল ফার্নান্দো স্যান্টোসকে। বিশ্বজয়ী স্পেনকে উড়িয়ে শেষ আটের ম্যাচ খেলতে এসেছে দলটা। আত্মবিশ্বাসের সিলিন্ডারের যে ‘ওভার ফ্লো’ হবে সেটা তো আর লেখার অপেক্ষা রাখে না। এরমধ্যে বিপক্ষের সবেচেয়ে বড় ম্যাচ উইনার বেঞ্চে বসে থাকলে বুকের ছাতি তো শুরু থেকেই চওড়া হয়ে যাবে। আগাগোড়া ডিফেন্স করে লুইস এনরিকের দলকে আটকে রেখেছিল ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের ছেলেরা। তবে শনিবার আল থুয়ামা স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে ছকে অনেকটাই বদল নিয়ে এল পূর্ব আফ্রিকার দল। আল্ট্রা ডিফেন্সিভ মেজাজ থেকে একটু সরে এসেছিল মরক্কো। নিজেদের দুর্গ আগলে বারবার প্রতি আক্রমণে উঠে যাচ্ছিলেন হাকিম জিয়েচ, এনিসিরিরা।