বর্তমান সময়ে যখন প্রতিনিয়ত হিংসা মারামারি এবং বিদ্বেষের খবর সামনে আসছে ঠিক সেই আবহেই অভাবী মানুষদের সাহায্যার্থে এবং তাঁদের পাশে দাঁড়াতে জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিলেন এক ব্যক্তি। পাশাপাশি তিনি তৈরি করেছেন এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্তও। সর্বোপরি, তিনি ইতিমধ্যেই তাঁর সমস্ত সম্পত্তি (Property) দান করে দিয়ে রীতিমতো “কলিযুগের কর্ণ” হয়ে উঠেছেন। বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা সেই ব্যক্তির প্রসঙ্গই অবতারণা করব।
বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজ করেছেন তিনি:মূলত, উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের শিল্পপতি ডা: অরবিন্দ কুমার গোয়েল তাঁর প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি গরীবদের মাঝে বিতরণ করেছেন। শুধুমাত্র নিজের থাকার জন্য মোরাদাবাদ সিভিল লাইনে অবস্থিত বাড়িটি রেখে বাকি সবকিছুই তিনি দান করেছেন। উল্লেখ্য যে, দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য, গোয়েল তাঁর সম্পত্তি সরাসরি রাজ্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। জানা গিয়েছে, তিনি উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র সহ একাধিক রাজ্যে ১০০ টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বৃদ্ধাশ্রম এবং হাসপাতালের ট্রাস্টির সাথে যুক্ত। এমনকি, করোনার সময় লকডাউনের মধ্যেও, তিনি মানুষকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। পাশাপাশি, ওই সময়ে তিনি মোরাদাবাদের ৫০টি গ্রামকে দত্তক নিয়েছিলেন এবং সেখানকার মানুষদের বিনামূল্যে খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করেছিলেন।
তাঁর পরিবারও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে: ডা: গোয়েল তাঁর পরিবারের সম্মতিতে এই মহৎ পদক্ষেপ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর এই সিদ্ধান্তে স্ত্রী রেণু সহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। জানা গিয়েছে, তাঁর বড় ছেলে মধুর গোয়েল মুম্বাইতে থাকেন। পাশাপাশি, ছোট ছেলে শুভম প্রকাশ গোয়েল মোরাদাবাদে থাকেন এবং তাঁর বাবাকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করেন। এছাড়াও, একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকেই আসে ভাবনা: গত সোমবার রাতে গোয়েল তাঁর সমস্ত সম্পদ দান করার ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, তিনি ২৫ বছর আগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ২৫ বছরের পুরোনো একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি এক ভ্রমণ করছিলাম। ডিসেম্বরের এক ঠান্ডার দিনে ট্রেনে ওঠার সাথে সাথে আমার সামনে একজন অত্যন্ত দরিদ্র লোক ছিলেন। এমনকি, তিনি ঠাণ্ডাতে কাঁপছিলেন। তাঁর গায়ে কোনো চাদর বা পায়েও চপ্পল ছিল না। তাঁকে দেখে আমি থেমে থাকতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে আমার জুতো খুলে তাঁকে দিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে আমার অবস্থাও খারাপ হতে শুরু করে।”
পাশাপাশি, ডক্টর গোয়েল আরও জানান, “সেদিন আমি বুঝেছিলাম যে, কত মানুষ এভাবে ঠাণ্ডা ভোগ করেন। তারপর থেকে আমি অভাবীদের সাহায্য করতে শুরু করি। এখন আমি অনেক এগিয়েছি। জীবনের কোনো ভরসা নেই। তাই সময় থাকতে থাকতে আমি আমার সম্পত্তি যাঁদের দরকার তাঁদের হাতে তুলে দিলাম। গরীব, নিঃস্ব, অনাথদের এটা কাজে আসবে। আমার সম্পত্তি দান করার জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। তাঁরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।”