“আমরা এমন একটা দল..”জয়ের পর যা মন্তব্য করলেন লিটন,গর্ব সারা বাংলাদেশের!

২০১৯ সালে প্রথম দেখায় নবীন টেস্ট দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। চার বছর পর দ্বিতীয় দেখায় সেই হারের শোধ তীব্রভাবে নিল স্বাগতিকরা। আফগানদের ৫৪৬ রানের ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে এবার যে বড় জয় এসেছে, তা রানের ব্যবধানে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পাওয়া জয়। সাকিব আল হাসানের চোটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন দাস দাপট ম্যাচ জুড়ে প্রতিপক্ষের উপর দাপট দেখানোর পর জানালেন পরিতৃপ্তি, তুলে ধরলেন টেস্ট নিয়ে নিজেদের চিন্তা।

ক্যাপ্টেন্সি কেমন উপভোগ করলেন? লিটন: অধিনায়কত্ব খুব উপভোগ করেছি। বোলাররা যেভাবে আমাকে সহায়তা করেছে… বিহাইন্ড দ্য বল দেখছি যে বোলাররা বল ক্যারি করাচ্ছে, স্লিপের দিকে বল যাচ্ছে। কিপিং করতেও মজা লেগেছে। যখন অধিনায়ক থাকি তখন ভালো লাগে যে যেকোনো সময় উইকেট পাওয়ার সুযোগ থাকে।যখন প্রথম ইনিংসে শান্ত ও জয়ের ভিত্তিতে আমরা ভালো স্কোর করলাম তখন থেকে আমরা বিশ্বাস করছিলাম প্রথম ইনিংসের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাদের আমরা দেড়শো আগে অলআউট করেছি। কাজেই ব্যবধানটা তখনই বোঝা গেছে কোন পথে যেতে পারি। কিন্তু কঠিন উইকেট ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও আমাদের ব্যাটাররা যেভাবে ক্যারেক্টার শো করেছে এটা সম্পূর্ণ ক্রেডিট আমাদের ব্যাটার ও বোলার পুরো দলের।

তিন পেসার ১৫ উইকেট নিয়েছে, পেসারের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন লিটন: মিরপুরে আমরা কখনো তিন পেসার নিয়ে খেলি না। যেহেতু উইকেটের আচরণটাই এমন ছিল তিন পেসার নিয়ে খেলার মতো। উইকেটে যথেষ্টই পেসারদের রসদ ছিল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি অধিনায়ক হিসেবে খুব খুশি। ২০১৯ সালের তুলনায় আফগানিস্তানের এই দল দুর্বল মনে হয়েছে কিনা? লিটন: এই জিনিসটা তুলনা করা কঠিন। কারণ অবশ্যই তাদের কিছু কিছু ভালো বোলার ছিল, তারা আসেনি। আসলেও যে খুব একটা বড় তফাৎ হতো তাও না। বিষয়টা হচ্ছে আমরা অনেক দিন ধরে টেস্ট খেলছি, তারা অনেক কম খেলে। তাদের জন্য কঠিন ছিল। অন্তত আমরা গেমের দিক থেকে এগিয়ে ছিলাম।৮৯ বছরের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জেতার রেকর্ড গড়েছেন।

জেতার বাইরেও জেতার ধরন কতটা আনন্দ দিচ্ছে? লিটন: অবশ্যই, এটা তো যখন চাইবেন তখনই হবে না-এরকম একটা ব্যবধান। এটার জন্য কৃতিত্ব ব্যাটারদের কারণ উইকেটটা এত সহজ ছিল না। প্রতিটা ব্যাটারকে কৃতিত্ব দিতে হবে। সত্যি কথা আমাদের বোলাররাও খুবই ভালো বল করেছে, লাইন লেন্থ মেনে বল করেছে। এটা টেস্ট ক্রিকেট কাজে বড় অর্জন। এরকম জিততে পারলে এর থেকে বড় কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না। অধিনায়ক হিসেবে আপনি এর থেকে বড় ব্যবধানে জয় চাইতে পারেন না কখনো।’ নাজমুল হোসেন শান্ত দুরন্ত ছন্দে আছে। আপনার দৃষ্টিতে সাফল্যের পেছনে তার কোন বদল বেশি চোখে লেগেছে? লিটন: দেখেন শান্তর জায়গায় আমিও ছিলাম কিছুদিন আগে। এসব নিয়ে শান্তর সঙ্গে আমার কথাবার্তাও হয়েছে। জানি না কতটুকু তাকে সাহায্য করেছে। তার হয়ত অনুশীলনের মেথড একটু বদল করেছে। আগে যেভাবে অনুশীলন করত এখন অনেক গুছনো। আপনি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে থাকবেন নিয়মিত আপনি কিন্তু জানবেন আপনার ঘাটতি কি। কোন জায়গায় আপনি শক্তিশালী, কোন জায়গায় আপনি দুর্বল। সে তার জিনিসটা খুব ভালোভাবে খুঁজে পেয়েছে। ওভাবেই অনুশীলন করেছে। এটা ভালো দিক। আমি চাইব ও যেভাবে খেলছে এটা যেন ধরে রাখে। খারাপ সময় আসবে-যাবে। ও যদি ধরে রাখতে পারে, কীভাবে সফল হয়েছে মনে রাখে তাহলে সাফল্য পাবে।

ঘরের মাঠে পেস বান্ধব উইকেটে নিয়মিত খেলবেন কিনা? লিটন: এটা নির্ভর করছে আমরা কার সঙ্গে খেলছি। এমন না যে শুধু স্পিন উইকেটে খেলব বা শুধু পেস উইকেটে খেলব। যার সঙ্গে খেলব তাদের শক্তি, দুর্বলতা সব কিছু পর্যালোচনা করে…যেটা মানুষ করে হোম এডভান্টেজ নেওয়া। এটাই করব। জয়, জাকির, শান্ত। অপেক্ষাকৃত তরুণ টপ অর্ডার ভালো পারফর্ম করা কতটা স্বস্তির? লিটন: আপনি যদি বড় দল হতে চান। পাঁচদিন ক্রিকেট খেলতে চান (টপ অর্ডারের পারফর্ম্যান্স জরুরি)।আমি অনুভব করি, আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমাদের বোলিংও যদি দেখেন। অফ স্পিনার, বাঁহাতি স্পিনার…পেসাররা সবাই ভালো করছে। পাইপলাইনে চার-পাঁচজন পেসার আছে যাদের যেকোনো সময় নামিয়ে দেওয়া যায়। এদিক থেকে বলব আমাদের বোলিং খুবই শক্তিশালী।হ্যাঁ আমাদের ব্যাটিং আগে নড়বড়ে ছিল। টেস্টে যদি টপ অর্ডার পারফর্ম না করে তাহলে খুব কঠিন ফিরে আসা। এদিক দিয়ে আমরা খুশি যে ব্যাটাররা পারফর্ম করছে। এটা ভালো দিক যে আমাদের ব্যাটাররা ক্যারেক্টার শো করছে। জাকির কেবল তৃতীয় টেস্ট খেলেছে। কখনই মনে হয়নি কেবল তৃতীয় টেস্ট খেলছে। ওর ভেতরে পরিপক্বতা এসেছে, একই কথা জয়ের বেলাতেও। জয় নিউজিল্যান্ডেও গেল। ওই যে ক্যারেক্টার শো করছে, আমরা চাই এরকম ক্যারেক্টার শো করবে। ডিটারমেশন অনেক হাই থাকবে যে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারব। জাকির রান আউট না হলে আরও বড় ইনিংস খেলতে পারত। যেভাবে সে খেলেছে আমি খুশি।

সাকিব না থাকাতে একধরণের ভালোও হয়েছে কিনা। কারণ হয়ত যারা পারফর্ম করেছে এরকম একজন বোলারকে বাদ দিতে হতো।লিটন: দেখেন ম্যাচের আগে হয়তবা এরকম ছিল সাকিব ভাই খেললে ভালো হত। ম্যাচের পরে আসছে যে খেললে ভালো হত কিনা। জিনিসটা এমন না, আপনার হাতে যা অস্ত্র আছে, যখন একাদশ তৈরি করে দিয়েছি। কে থাকবে না থাকবে এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। হয়ত দুই বছর পর বা চার বছর পর এমন দিন আসবে যখন সাকিব ভাই থাকবে না। বাংলাদেশ দলকে তো এগুতে হবে। যে দলটা খেলেছে সেটা বাংলাদেশের সেরা দল ছিল। তারা তাদের ভূমিকা পালন করেছে।

আপনার কি মনে হয় জয়, জাকিরদের সাহায্য করেছে ‘এ’ দলে নিয়মিত খেলা? প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা? লিটন: অবশ্যই। আমার মনে হয় জাকির ৬০ এর বেশি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছে (টেস্ট অভিষেকের আগে)। যত বেশি চার দিনের ম্যাচ খেলবেন আইডিয়া বেশি হবে। যদিও কদিন আগে অভিষেক হয়েছে। কিন্তু চারদিনের ম্যাচ হেল্প করেছে। আপনি যদি একটা খেলোয়াড়কে চার-পাঁচ ম্যাচ পর নিয়ে আসেন, আর আরেকটা প্লেয়ার যদি ৬০, ৭০ ম্যাচ পর আসে পার্থক্য অনেকটা বোঝা যায়। যত বেশি লাল বলের ম্যাচ খেলা যায় টেস্ট ক্রিকেট তত সহজ হবে।