‘মা না থাকলে সেদিনের পর আর হাঁটতে পারতাম না’,গরীব মাকে স্যালুট জানালেন নেটিজেনরা

যুবক বলেন “আমার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার পাহাড়ি এলাকায়। এলাকাটিতে ছোট বড় পাহাড় ও গাছ-গাছালি রয়েছে। সন্ধ্যার পর এলাকাটি নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এলাকায় এখনো গড়ে ওঠেনি ভালো মানের স্কুল-কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য যেতে হয় দূর-দূরান্তে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের বসবাস করতে হয়। এই পরিবেশে অতি যত্নে আগলে রেখেছেন মা-বাবা।” কথাগুলো বলছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়দর্শী চাকমা।তিনি বলেন, কয়েক বছর আগের কথা। স্থানীয় কলেজে পড়ার সময় … মা না থাকলে হয়তো আর জীবনে কোনদিন হাঁটতে পারতাম না।

বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলার সময় পা ভেঙে যায়। বন্ধুরা আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। কাছাকাছি কোনো হাসপাতালও ছিলো না যে সেখানে দ্রুত নিয়ে যাবে। সেদিন দেখেছিলাম আমার মায়ের ছোটাছুটি। সেদিন তিনি নিজেই হয়েছিলেন আমার ডাক্তার। অন্ধকারে জঙ্গলে ঢুকে বিভিন্ন ঔষধি গাছ সংগ্রহ করে ওষুধ বানিয়ে আমাকে কিছু খেতে দেন আর কিছু পায়ে লাগিয়ে দেন। দিনে অনেক কাজ করার পরও আমার জন্য সারারাত জেগে ছিলেন। এরপর আমার পা ভালো না হওয়া পর্যন্ত আমার সঙ্গে ছিলেন। মা না থাকলে সেদিনের পর হয়তো আর হাঁটতে পারতাম না।প্রিয়দর্শী চাকমা বলেন, রংপুরে বেগম রোকেয়া রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হই তখন তেমন কিছু মনে না হলেও কিছুদিন পর থেকেই মায়ের কথা খুব মনে পরে।

যখন মায়ের কথা মনে পরে তখন ফোনে কথা বলি। ফোন করলে মা প্রায় সময়ই জানতে চান শরীর ভালো আছে কি না? কি খেয়েছি? রংপুরের খাবার খাইতে পারি কি না? পড়াশোনা করছি কি না? আর জানতে চায় কবে ক্যাম্পাস ছুটি হবে? আর ছুটি পেলেই মায়ের ডাকাডাকি শুরু হয়। কবে বাড়িতে ফিরবো? কবে আসবো? তিনি আমার প্রিয় খাবারগুলো জমা করে রাখেন। বাড়িতে ফিরলে সেগুলো রান্না করে দেন।তিনি আরও বলেন, এখন আর ইচ্ছা করলেও যখন তখন বাড়ি যেতে পারি না। আমাদের উৎসব গুলোতেও যেতে পারি না। ঐ সময় রংপুরে অবস্থান করা আদিবাসীদের সঙ্গে উৎসব পালন করি। রংপুরে তারা আমাদের পরিবার হয়ে ওঠে।

রংপুরে আমাদের এলাকার সবজিনিস পাওয়া যায় না। তাই উৎসবও জমে না।মা প্রতিটি উৎসবের সময় আমাদের সাজিয়ে দেন। ভালো ভালো খাবার রান্না করেন। আমরা সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া, একসঙ্গে আদিবাসি গান, নাচ হয়। আমাদের মা বাবারাও নতুন পোষাক পড়ে। তখন খুব মজা হয়।মা নিজে বেশিদুর লেখাপড়া করতে না পারলেও আমাদের দুই ভাইকে লেখাপড়ায় উৎসাহ দেন।

তবে তিনি অনেক পরিশ্রমী। রান্নার কাজ করার পাশাপাশি বাড়ির বাইরেও অনেক কাজ করে থাকেন।প্রিয়দর্শী চাকমা আরও বলেন আমিও মা-বাবাকে অনেক ভালোবাসি। তারা যে ভাবে আমায় আগলিয়ে রেখেছে। আমিও তাদের সেবা শ্রুষা করবো।