‘মূল্যবান’ পয়সার দাম দিন দিন কমে রূপকথার গল্পের যুগে ঠিকানা করে নিয়েছে। এক সময় যে পয়সার এত মূল্য ছিল, কালের পরিক্রমায় এখন তা দিয়ে কোনো পণ্য পাওয়া যায় না।শুধু মোবাইলফোন কম্পানিগুলোর কাছ থেকে কথা বলার জন্য কয়েক সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়। হালে মোবাইল ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে ‘প্রতি সেকেন্ড ১ পয়সা’ জাতীয় সুযোগ দেওয়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে পয়সার মূল্য। তবে পয়সা বা এক টাকা-দুই টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমা নিয়ে চিন্তিত নয় সরকার। বরং এসব ব্যাংক নোটের তুলনায় সরকারি মুদ্রার অংশীদারি কমে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে অর্থ বিভাগ।বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, দুই টাকার কয়েন বা দুই টাকার নোট পর্যন্ত সরকারি মুদ্রা।
পাঁচ টাকার নোট ও কয়েন থেকে ১০০০ টাকার নোট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের। স্বাধীনতার পর মুদ্রাবাজারে মোট টাকার মধ্যে সরকারি মুদ্রার যে অংশ ছিল, দিন দিন তা অনেক কমে গেছে। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বছরওয়ারি ও মাসওয়ারি দেশের অর্থের সরবরাহ, মোট সরবরাহ থাকা অর্থের মধ্যে সরকারি মুদ্রার হার, ১৯৭৪-৭৫ সালে দেশের বাজারে প্রচলিত অর্থের মোট পরিমাণ ছিল ৩১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ৩০৬ গুণ বেড়ে হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ও কয়েন ৩৪০ গুণ বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। কিন্তু এ তুলনায় সরকারি নোট ও কয়েন বাড়েনি। ১৯৭৪-৭৫ সালে বাজারে প্রচলিত নোট ও কয়েনের মধ্যে সরকারি মুদ্রার মূল্যমান ছিল ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা ২৩ গুণের মতো বেড়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ৭৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
আর ১৯৭৪-৭৫ সালে জিডিপির তুলনায় সরকারি মুদ্রার হার ছিল দশমিক ২৭ শতাংশ, ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ বিবেচনায় ২.৬৯ ও বাজেটের অনুপাতে ছিল ৩.২১ শতাংশ। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর শেষে তা জিডিপির তুলনায় দশমিক ০৬, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বিবেচনায় দশমিক ১১ এবং বাজেটের আকারের তুলনায় দশমিক ৩১ শতাংশে নেমেছে।২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের মুদ্রাবাজারে প্রচলিত মুদ্রার মধ্যে সরকারি মুদ্রার অংশীদারির তথ্য তুলে ধরে অর্থ বিভাগ বলেছে, ‘২০১০ সাল পর্যন্ত (হালনাগাদ তথ্য নেই) বাজারে প্রচলিত মোট মুদ্রার মধ্যে সরকারি মুদ্রার অনুপাত বাংলাদেশের তুলনায় শুধু মিসর ও পাকিস্তানের কম ছিল। অন্যান্য দেশে এই অনুপাত বাংলাদেশের তুলনায় বেশি।
২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি ভারতে এই হার ১.৩৬ শতাংশে অব’স্থান করছে। অথচ ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশে এই অনুপাত ছিল দশমিক ৮৩ শতাংশ।’ এ অবস্থায় মুদ্রাবাজারে সরকারি মুদ্রার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পাঁচ টাকার কয়েন বা নোটকে ব্যাংক নোটের পরিবর্তে সরকারি মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ। ওই বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, সরকারের ঐতিহ্যের স্মারক এসব মুদ্রাবাজার থেকে ত্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই অবস্থা প্রতিহত করার জন্য পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট বা কয়েন গুলো সরকারের মালিকানায় প্রবর্তন করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।এটি হলে বর্তমানে মুদ্রাবাজারে মোট মুদ্রার মধ্যে সরকারি মুদ্রার অংশীদারি দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দেড় শতাংশ হবে।
আর পাঁচ টাকা সরকারি মুদ্রা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ কমবে প্রায় ৭৯০ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে বাজারে প্রচলিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ টাকা মূল্যমানের নোট ও কয়েনগুলো বাতিল করবে না সরকার। বরং পুরনো এসব নোট ও কয়েন প্রতিস্থাপন করবে সরকার প্রবর্তিত নতুন নোট ও কয়েন। ফলে দেশে মোট অর্থের জোগান অপরিবর্তিত থাকবে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কাও থাকবে না।