আমির হামজার বল আলতো করে ডিফেন্স করেই রান নিতে ছুটলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্রুতগতিতে রান পূরণ করেও থামলেন না। অনেকটা ছুটে গেলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। লাফিয়ে ওঠা আর ব্যাট চুমু এঁকে বাড়িয়ে ধরার চেনা দৃশ্য তো থাকলই। সব মিলিয়ে তার ক্যারিয়ারের এই সময়ের প্রতীকী হয়ে উঠল উদযাপনটুকু। শান্ত ছুটছেন, আপাতত থামাথামি নেই!আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনেই দ্বিতীয় সেশনে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেললেন শান্ত। ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে তিনি। সেই ফর্মকে এবার বয়ে আনলেন টেস্টে।
সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন যেন আফগান বোলাররাও। আলগা বল করে গেলেন তারা মোটামুটি নিয়মিতই। তা কাজে লাগিয়ে দারুণ সব শটের পসরা মেলে ধরে ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কে।টেস্টে তার সেঞ্চুরি আছে আরও দুটি। ওয়ানডেতেও আছে এখন একটি সেঞ্চুরি। আরও ভালো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলেছেন সেই ইনিংসগুলি।এই সেঞ্চুরি তবু আলাদা করেই সবসময় মনে রাখবেন শান্ত। দেশের মাঠে যে শতরানের স্বাদ পেলেন প্রথমবার!ইনিংসটি খুব জরুরিও ছিল তার জন্য। ওয়ানডেতে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ খেলছিলেন। গত মাসেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি উপহার দেন চেমসফোর্ডে। ওই সিরিজে তিনি ছিলেন ম্যান অব দা সিরিজ। প্রথম ১৫ ওয়ানডে ইনিংসে তার ফিফটি ছিল না কোনো। সবশেষ ৮ ইনিংসে ওই সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি করেছেন আরও ৩টি। অপেক্ষা ছিল লাল বলেও রানে ফেরার।
এই ইনিংসের আগে টানা ২৫ টেস্ট ইনিংসে তার ছিল না সেঞ্চুরি। এই সময়ে ফিফটি ছুঁতে পেরেছিলেন স্রেফ ২ বার। অবশেষে সেই দুঃসময়ের ছায়া এবার সরাতে পারলেন।দিনের শুরুটা অবশ্য বাংলাদেশের জন্য ভালো ছিল না। সবুজাভ উইকেটে টস জিতে বোলিং নেয় আফগানিস্তান। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই অভিষিক্ত পেনার নিজাত মাসুদ নিজের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন ওপেনার জাকির হাসানকে। শান্তকে তাই ক্রিজে নামতে হয় বেশ দ্রুতই।তবে ছন্দ পেতেও তার সময় লাগেনি খুব একটা। উইকেটে যাওয়ার পরপরই টানা দুই বলে বাউন্ডারি মারেন ইয়ামিন আহমেদজাইকে। এরপর তার ব্যাটে বাউন্ডারিই হয়ে যায় সবচেয়ে নিয়মিত দৃশ্য।ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি ৫৮ বলে। এখনও পর্যন্ত যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্রুততম। পঞ্চাশে বাউন্ডারিই ছিল ১০টি। লাঞ্চে যান তিনি ৬৪ রান নিয়ে।
বিরতির পরও শুরু করেন যেন সেখান থেকেই। পেস-স্পিন, সবকিছুতেই তার ব্যাট ছিল সমান সাবলিল। পেসার নিজাত মাসুদের এক ওভারে বল বাউন্ডারিতে পাঠান ৩ বার, পরের ওভারে বাঁহাতি স্পিনার আমির হামজা হোতাকের বলে দুটি।পরে হামজার বলেই ওই দ্রুতগতির সিঙ্গেলে তিন অঙ্কের ঠিকানায় পৌঁছে যান ১১৮ বলে।টেস্টে প্রথমবার এই স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাল্লেকেলেতে সেই ইনিংসে থেমেছিলেন ৩৭৮ বলে ১৬৩ রান করে।
চার ইনিংস পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে খেলেন ১১৮ বলে ১১৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। এরপরই শুরু হয়েছিল খরা। যেটির অবসান হলো এবার।যেভাবে তিনি খেলছেন এবং আফগান বোলিং যতটা নির্বিষ, তাতে এই ইনিংসকে অনেক বড় করার সুযোগ আছে তার।